চেক ডিজআনার মামলা করবেন যেভাবে

যে কোন প্রকার অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণত আমরা ব্যাংক চেক প্রদান করে থাকি ও পরবর্তীতে সেই চেকের টাকায় রুপান্তরিত না করতে পারলে তখন চেক প্রদানকারী অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলা করতে পারবেন।

একটি চেকের মামলা কিভাবে করতে হয়, আর সেই চেকের টাকা কিভাবে উদ্ধার করবেন?

একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে চেক ডিজঅনার হলে চেক প্রদানকারী অ্যাকাউন্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। অপর্যাপ্ততার কারণে ব্যাংকের চেক প্রত্যাখ্যাত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। তহবিল অপর্যাপ্ততায় কোন চেক প্রত্যাখ্যাত বা ডিজঅনার হলে সেই সব অপরাধের প্রতিকারের সুরক্ষা বিধান করা হয়েছে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (এনআই অ্যাক্ট) ১৩৮, ১৪০ ও ১৪১ ধারায়।

এনআই অ্যাক্ট আইন কি;

এই আইনে মামলা করতে হলে কোন দায় অথবা ঋণ পরিশোধের জন্য চেকটা ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তির স্বাক্ষরিত চেক প্রদানকারী কর্তৃক ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস সময়ের মধ্যে নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক চেকটি অপরিশোধিত অবস্থায় ফেরত আসবে। চেক ডিজঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে চেক ডিজঅনার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হবে।

কিভাবে টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হবে:

চেকের মামলার ক্ষেত্রে তিন ভাবে দাবী জানাতে হবে-

১। নোটিশ গ্রহীতার হাতে সরাসরি নোটিশ প্রদান করে।

২। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে চেক প্রদানকারীর জ্ঞাত ঠিকানায় ।

৩। সবাসের ঠিকানা কিংবা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর নোটিশ প্রেরণ করে।
সর্বশেষ কোনো জাতীয় বাংলা দৈনিকে নোটিশটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে। এই তিন পদ্ধতির যে কোন একটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

তবে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না-

চেক প্রদানকারী নোটিশ প্রাপ্তির পর চেকের প্রাপক বরাবরে চেকে উল্লেখিত অংকের টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে। অভিযোগকারী সিআর মামলা হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা ফাইলিং করতে পারবেন। মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, ডিজঅনারের রসিদ, আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি, পোস্টাল রসিদ, প্রাপ্তি রসিদ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এসবের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে জমা করতে হবে। সিআর মামলা দায়ের করার পর সমন এবং ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন বিচারিক আদালত। বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করলেও অপরাধের মূল বিচার হয় দায়রা জজ আদালতে। দায়রা জজ তখন অন্য কোন দায়রা জজের নিকট বিচারের জন্য পাঠাতে পারেন।

চেকের মামলায় কি শাস্তি পেতে পারেন-

মামলার বিচার শেষে অপরাধের শাস্তি হিসাবে আইনানুসারে আদালত ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুণ পর্যন্ত পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মামলার আপীল করার সুযোগ আছে। তবে আপীল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উল্লেখিত টাকার পঞ্চাশ শতাংশ (৫০%) টাকা যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন সেই আদালতে জমা দিতে হবে।

তবে অনেক সময়ে দেখা যায় আসামিরা কারাদণ্ড ভোগ করে বেরিয়ে যান। পাওনা টাকা আর পরিশোধ করেন না। এজন্য বিচারিক আদালত চেকের মামলায় জরিমানার টাকা আদায়ে জেলা কালেক্টর অথবা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেওয়ানী আদালতে জারী মামলা দায়ের করতে হয়। যদি কোন কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে মামলা করা না যায় তাহরে পেনাল কোডের ৪০৬ ও ৪২০ ধারা অনুসারে মামলা করা যায়। কিন্তু এই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। শুধুমাত্র শাস্তিটুকু প্রদান করা সম্ভব।

Leave a Comment