বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির স্থান দেশের অন্য সবার ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশের সংবিধানে এটাই বলা হয়েছে। আমরা অবশ্য রাষ্ট্রপতিকে খুব একটা দৃশ্যমান দেখি না, তাঁকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাও হয় না। তবে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। পূর্বের রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবারও তাঁর ক্ষমতা- নিয়োগ নিয়ে নানান কথাবার্তা-আলোচনা হচ্ছে।
সংবিধান অনুয়াযী, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী, তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে।
বাংলাদেশের সংবিধান এবং সাংবিধানিক রীতিনীতি অনুসারে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আসলে কতটুকু? রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিধি সম্পর্কে বাংলাদেশর সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ থেকে ৫৪ অনুচ্ছেদে যা বলা রয়েছে।
বাংলাদেশর সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ:
বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোন আইনের দ্বারা তাঁর উপর দেওয়া সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করবেন। এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্টপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শ দিয়েছেন কি না, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার জন্য যে সকল যোগ্যতা থাকতে হবে:
কমপক্ষে পঁয়ত্রিশ বৎসরের বয়স্ক হতে হবে। সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা থাকতে হবে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা:
অনুচ্ছেদ ৪৯ অনুযায়ী কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।
রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদকাল:
অনুচ্ছেদ ৫০ অনুযায়ী এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত পদে মেয়াদ থাকবে। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। একাদিক্রমে হউক বা না হউক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোন ব্যক্তি নিয়োগ হবেন না। স্পীকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি:
অনুচ্ছেদ ৫১ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁহার দায়িত্ব পালন করার সময় কোন কাজ করলে সেইজন্য তাঁকে কোন আদালতে জবাবদিহি করতে হবে না। তবে এই দফা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণে কোন ব্যক্তির অধিকার ক্ষুণ্ন করিবে না। রাষ্ট্রপতির কার্যভারকালে তাঁর বিরুদ্ধে কোন আদালতে কোন প্রকার ফৌজদারী আইনে মামলা দায়ের করা বা চালু রাখা যাবে না । তাঁহার গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোন আদালত হইতে পরোয়ানা জারি করা যাবে না।
রাষ্ট্রপতির বেতন কত:
দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্ট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই টাকা আয়করমুক্ত। আগে এই বেতন ছিল ৬১ হাজার ২০০ টাকা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে তা বাড়ানো হয়। রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের (এন্টারটেইনমেন্ট) জন্য বছরে ভাতা পান। এই টাকার নিরীক্ষা হবে না। রাষ্ট্রপতির জন্য সরকারি বাসভবন (বঙ্গভবন) থাকবে, যার সাজসজ্জা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেবে সরকার। স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রপতি পরিবহন (গাড়ি) সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রপতি অফিশিয়াল কাজে দেশের বাইরে গেলে সরকার নির্ধারিত ভাতা পাবেন। রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন তহবিল বছরে দুই কোটি টাকা। রাষ্ট্রপতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেশের যেকোনো হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেশের বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেই খরচও সরকার দেবে।
রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে বিমাসুবিধার ব্যবস্থা আছে। এই বিমাসুবিধা এখন বছরে ২৭ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের আগে ছিল ১৫ লাখ টাকা। এ রকম আরও বেশ কিছু সুবিধা পান রাষ্ট্রের ১ নম্বর ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি।